আন্তর্জাতিক: বৈশ্বিক জ্বালানি সংকটে নতুন মোড়—তেলের দামের ঊর্ধ্বগতিতে বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল দেশগুলোর উদ্বেগ
ঢাকা, ৩০ জুন ২০২৫ – বিশ্বজুড়ে চলমান জ্বালানি সংকট এক নতুন মোড় নিয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যে উদ্ভূত সাম্প্রতিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা এবং প্রধান তেল উৎপাদনকারী দেশগুলোর উৎপাদন হ্রাসের ঘোষণায় আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম আবারও আকাশ ছুঁয়েছে। এই অপ্রত্যাশিত মূল্যবৃদ্ধি বাংলাদেশসহ বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য নতুন করে উদ্বেগ তৈরি করেছে, কারণ এর সরাসরি প্রভাব পড়বে আমদানি ব্যয় এবং দৈনন্দিন জনজীবনে।
গত কয়েক সপ্তাহে আন্তর্জাতিক বাজারে ব্রেন্ট ক্রুড এবং ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট (WTI) তেলের দাম অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, মধ্যপ্রাচ্যের একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলে রাজনৈতিক অস্থিরতা, যা বৈশ্বিক তেল সরবরাহে বিঘ্ন ঘটাতে পারে এমন আশঙ্কা, এই মূল্যবৃদ্ধির অন্যতম কারণ। একই সাথে, প্রধান তেল উৎপাদনকারী দেশগুলোর জোট (OPEC+) তাদের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা বাজারে তেলের সরবরাহ আরও কমিয়ে দিয়েছে। এই দুই ফ্যাক্টর একসাথে কাজ করে বৈশ্বিক জ্বালানি বাজারকে অস্থিতিশীল করে তুলেছে।
বাংলাদেশের মতো দেশগুলো, যারা তাদের জ্বালানি চাহিদার সিংহভাগ আমদানির মাধ্যমে পূরণ করে, তাদের জন্য এই পরিস্থিতি অত্যন্ত উদ্বেগের। তেলের দাম বৃদ্ধির ফলে দেশের আমদানি ব্যয় উল্লেখযোগ্য হারে বাড়বে, যা বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর চাপ সৃষ্টি করবে। এর সরাসরি প্রভাব পড়বে দেশের অর্থনীতিতে। পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধি পাবে, বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ বাড়বে, এবং কৃষিখাত ও শিল্প কারখানায় উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধির ফলে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় আরও বেড়ে যাবে, যা তাদের ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করবে।
সরকার এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় সম্ভাব্য বিকল্প নিয়ে ভাবছে। অভ্যন্তরীণভাবে জ্বালানি সাশ্রয়ের পদক্ষেপ নেওয়া এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎসের ওপর জোর দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে। একই সাথে, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়িয়ে স্থিতিশীল ও ন্যায্যমূল্যে জ্বালানি নিশ্চিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে, বৈশ্বিক বাজারে তেলের দামের এই ঊর্ধ্বগতি স্বল্প মেয়াদে বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবেই বিবেচিত হচ্ছে।
জাতিসংঘ এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা এই পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে এবং স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার জন্য আন্তর্জাতিক সহযোগিতার আহ্বান জানাচ্ছে। বৈশ্বিক অর্থনীতির পুনরুদ্ধার যখন সবেমাত্র শুরু হয়েছিল, ঠিক তখনই এই জ্বালানি সংকট নতুন করে অনিশ্চয়তা তৈরি করল। এখন দেখার পালা, বিশ্বনেতারা কীভাবে এই জটিল পরিস্থিতি মোকাবিলা করেন এবং এর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব কী হয়।
Post a Comment